দি এম্পটি আর্থ (প্রথম অংশ)
– বিশ্বদীপ মুখার্জী
পর্ব – ১
…………….
সাল – 2022
…………………
এক সাংবাদিক প্রফেসার প্রফুল্ল গুহকে প্রশ্ন করলো – ‘এটা কি শুধু আপনার অনুমান মাত্র?’
প্রফুল্ল গুহ তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে জবাব দিলেন – ‘বইটা ভালো করে আগে পড়ুন আপনি। জবাব পেয়ে যাবেন। আমাদের পূর্বপুরুষদের নাম বলতে গেলে দু’বার ঢোঁক গিলতে হয়। এক পুরুষ, দু’পুরুষ, তিন পুরুষ…ব্যাস, এখানেই শেষ। এরপর আর মনে থাকে না। কে মনে রাখবে চোদ্দ পুরুষের নাম? মনে রাখা তো দূরের কথা, আমরা জানিই না তাদের নাম কী ছিল। বলতে গেলে পূর্বপুরুষদের বিশাল লিস্ট। কিন্তু আমাদের আগামী প্রজন্মের ক্ষেত্রে কি লিস্টটা বিশাল হবে? আমার নাতি, তার নাতি, তার নাতি…. এরা কি আদৌ জন্ম গ্রহণ করবে কি না একটা সন্দেহ থেকেই যায়। কিছু বছর আগে আমরা যে পাখিদের দেখতাম, অধিকাংশই তারা বিলুপ্ত প্রায়। যে পোকামাকড়কে দেখতাম তারাও বেশিরভাগ বিলুপ্তের পথে। যে পরিমাণে আমাদের আশেপাশে বিষাক্ত রেডিয়েশন ছড়িয়ে পড়ছে, তার দৌলতে বেশি দিন নেই যে মনুষ্য জাতিও বিলুপ্তের পথে এগিয়ে যাবে। বেশি দিন না, খুব বেশি হলে একশো বছর। তার পর মানুষের অবশেষ থেকে যাবে মাত্র এই পৃথিবীতে। আমি নিজের বই ‘দি এম্পটি আর্থ’এ বোঝাবারই চেষ্টা করেছি। আরও অনেক তথ্য আছে, আরও অনেক কারণের ব্যাখ্যা করা আছে এই বইয়ে। পড়লে বুঝতে পারবেন।’
নিজের কথা শেষ করলেন প্রফেসার প্রফুল্ল গুহ।
পর্ব – ২
………………
সাল – 2036
……………………
ডক্টর অনুপম ব্যানার্জী একটা বক্তৃতা দিয়ে বাড়ি ফিরছেন। তার থ্রী ডি মোবাইলে রিং হলো। স্ক্রিনে ভেসে উঠল ডক্টর দিবাকর চৌধুরীর মুখ।
‘হ্যালো।’
‘কনগ্রাচুলেশন ডক্টর ব্যানার্জী। আপনার বক্তৃতা শুনলাম। জাস্ট ফ্যান্টাস্টিক। এক দিকে আপনি ডক্টর আর অন্য দিকে এক সফল গবেষক। আপনার সাকসেস দেখে সমস্ত ডক্টর জাতির বুক ফুলে উঠবে।’
‘থ্যাঙ্ক ইউ ডক্টর চৌধুরী।’
‘নো ডক্টর নো। শুধু থ্যাঙ্ক ইউ দিয়ে কাজ হবে না। চলে আসুন, দেখা করা যাক। সেলিব্রেট করা যাক। আজ রাত আটটায় ড্রিম ল্যান্ড বারে চলে আসুন। আপনার অপেক্ষা করবো আমি।’
মুখোমুখি বসে আছেন দুই বিখ্যাত ডক্টর…. ডক্টর অনুপম ব্যানার্জী আর ডক্টর দিবাকর চৌধুরী। তাদের সামনের টেবিলে কিছু খাবার আর দু’টো গ্লাসে দামী বিলেতি মদ। গ্লাসে এক চুমুক দিয়ে ডক্টর ব্যানার্জী বললেন – ‘আজকের দিনে আমরা দু’ জনেই কিছুটা হলেও বিখ্যাত হয়েছি। নিজেদের কঠিন পরিশ্রমের ফলে। কিন্তু ব্যাপারটা কী জানেন ডক্টর চৌধুরী? আমাদের চিন্তাধারা অনেকটা এক হলেও আমাদের কাজ করার পদ্ধতিতে বিস্তর তফাৎ। আপনাকে সাথে নিয়ে আমি একটা গবেষণাতে হাত দিয়েছিলাম। পরিণাম আপনার জানা আছে। কাজের মাঝে যদি ইগো প্রবলেম চলে আসে তাহলে সেই কাজ কোনও দিন সাকসেস হয় না।’
‘কিন্তু আমাদের লক্ষ্য যে এক সেটা তো আপনি জানেন? এ বিষয়ে প্রথম আমিই আপনাকে বলেছিলাম। আপনি আমার থেকে পুরো ব্যাপারটা শুনে নিজে গবেষণা করতে শুরু করলেন। আমাকে জানাবার প্রয়োজন বোধ করলেন না একবারও। স্পাই লাগিয়ে আমি সেটা জানতে পারি। দেখুন ডক্টর ব্যানার্জী, আপনি গবেষণা চালিয়ে যান, আমার কোনও আপত্তি নেই। আমি শুধু এটা চাই যে গবেষণার শেষে ক্রেডিটে যেন আমার নামটাও থাকে।’ বললেন ডক্টর চৌধুরী।
একটা কটাক্ষের হাসি হাসলেন ডক্টর অনুপম ব্যানার্জী। বললেন – ‘আপনি যদি এটা মনে করছেন যে আমি আপনার আইডিয়া চুরি করেছি, তাহলে সেটা ভুল ভাবছেন আপনি। এই আইডিয়াটা বহু দিন আগেই আমার মাথায় এসেছিল। আর যত দূর ক্রেডিটের কথা বলছেন, আমি অকারণ কাউকে ক্রেডিট দিই না।’
পর্ব – ৩
…………..
সাল – 2048
……………………
শায়কের খুব ভালোলাগে তৃষাকে। তৃষা তার থেকে বয়সে বড়, তার স্কুলের শিক্ষিকা। কিন্তু ভালোবাসা কি বয়স মানে? হয়তো না। শায়কের বয়স কম…. চোদ্দ, পনেরো বছর। বলা হয় নাকি এই সময়টা খুব খারাপ। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ খুবই বেশি থাকে এই বয়সে। হয়তো বিপরীত লিঙ্গের বিষয় জানার প্রবল ইচ্ছের কারণে। তৃষার বয়স তিরিশের ঊর্ধ্বে। বেশ খোলামেলা সে। শুধু পোষাকেই নয়, স্বভাবেও। শায়কের প্রতি যেন একটু বেশিই খোলামেলা হয়ে যায় তৃষা। তার এই খোলামেলা স্বভাবই শায়ককে আকৃষ্ট করে তার দিকে। কারণে অকারণে শায়কের গালে, হাতে, উরুতে হাত দেওয়া যেন নিজের স্বভাব বানিয়ে নিয়েছে তৃষা। শুরুতে শায়কের অস্বস্তি হতো, পরে সেটা অভ্যাস হয়ে গেল তার। তৃষার দেখাদেখি শায়কও সেই কাজ করতে শুরু করলো। তৃষা কোনও বাধা দিলো না। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে তৃষা একদিন শায়ককে বলল – ‘শায়ক, কাল স্পেশাল দিন।’
‘কেন ম্যাম?’ প্রশ্ন করলো শায়ক।
‘উফ্ফ! কতবার তোমাকে বারণ করেছি যে আমায় ম্যাম বলবে না। বাকি স্টুডেন্টের সামনে ম্যাম বলো সেটা ঠিক আছে। কিন্তু আড়ালে তো আমাকে নাম ধরে ডাকতে পারো। আমারও ভালো লাগবে। হ্যাঁ, যেটা বলছিলাম। কাল স্পেশাল দিন। কারণ, কাল আমার বার্থ ডে। আর কেমন কোইনসিডেন্স ভাবো, কাল আবার ছুটির দিন। কাল তুমি আমার ফ্ল্যাটে আসবে। আমরা দু’জনে মিলে সেলিব্রেট করবো।’
‘কিন্তু আমি বাড়িতে কী বলে বেরবো?’
‘উফ্ফ শায়ক। যুগ কত এগিয়ে গেছে। আর তুমি আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পুরনো কথা বলছো?’
বাড়িতে কিছু একটা বলে বেরিয়ে পড়েছিল শায়ক। সে জানে তৃষার ফ্ল্যাটে তৃষা ছাড়া আর কেউ থাকে না। তৃষা কোনও দিন এমন প্রস্তাব দিতে পারে সেটা স্বপ্নেও ভাবেনি শায়ক। তার মনটা বারবার রোমাঞ্চিত হয়ে উঠছিল তৃষাকে কাছ থেকে পাবে বলে। পনেরো বছরের শায়ক সে দিন প্রথমবার শারীরিক সম্পর্কের অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল। মদের নেশায় উন্মাদ হয়ে ছিঁড়ে খেতে চেয়েছিল তৃষার নগ্ন দেহকে। যখন ঘুম ভাঙ্গে শায়কের তখন নিজেকে পায় তৃষার বিছানায়। পাশে একটা চেয়ারে বসে আছে তৃষা। মৃদু হাসছে শায়কের দিকে তাকিয়ে।
শায়কের হৃদয় চুড়মাড় হয়ে গেল সে দিন, যে দিন সে নিজের বেশ কিছু বন্ধুর থেকে জানতে পারে যে তৃষা নাকি তাদের সাথেও শারীরিক সম্পর্ক করেছে। তৃষাকে আর স্কুলে দেখা গেল না। সে কোথায় চলে গেল কেউ জানে না।
প্রায় বছর দেড়েক পর পুলিশ দেশের বেশ কিছু জায়গা থেকে বহুসংখ্যক মহিলাদের গ্রেপ্তার করে। অভিযোগ, তারা নাকি জোর করে অল্প বয়সী ছেলেদের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়। বলতে গেলে অল্প বয়সী ছেলেদের ধর্ষণ করে তারা। ছেলেদের আগে নিজের প্রেমে ফাঁসানোর চেষ্টা করে। চেষ্টায় সফল হলে ভালো, না তো সোজা ধর্ষণ। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, প্রত্যেক মহিলারাই হয়তো গ্রেপ্তারের আগে কিম্বা পরে আত্মহত্যা করে। তাদের কাছে নাকি পটাশিয়াম সায়ানাইড ছিল।
পর্ব – ৪
………………
সাল – 2070
……………………
কফিতে শেষ চুমুক দিয়ে কাপটা সামনের সেন্টার টেবিলে রেখে অর্চিষ্মান বলল – ‘ভাবতে বাধ্য হচ্ছি। না ভেবে উপায় নেই।’
সামনে বসে আছেন তার সিনিয়ার আবির্ভাব গাঙ্গুলী। তিনি বললেন – ‘তাই তো তোমায় বলছি। ভালো করে চিন্তা করে দেখো। এর কূলকিনারা আমাদের বের করতেই হবে।’
‘রেশিও টা সাংঘাতিক। শেষ কুড়ি পঁচিশ বছরের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে। সাল 2050এ আমাদের দেশের পপুলেশন ছিল প্রায় একশো ষাট কোটির মত, যেটা কুড়ি বছর পর এখন মাত্র একশো চৌষট্টি কোটি। কুড়ি বছরে মাত্র চার কোটি।’ বলল অর্চিষ্মান।
‘চিন্তার বিষয় তো এটাই অর্চিষ্মান। মৃত্যুর অনুপাতও যে বেড়েছে তাও নয়। হঠাৎ করে মানুষের জন্ম কমে গেল কেন? এমনও তো নয় যে লোকেরা বিয়ে করছে না। বিয়েও করছে, সংসারও করছে, তাদের সন্তানও জন্মাচ্ছে। তাহলে মানুষ জন্ম অনুপাতে এত পতনের কারণ কী?’
খানিক চিন্তা করে আভির্ভাব গাঙ্গুলী আবার বললেন – ‘কোথাও গন্ডগোল আছে অর্চিষ্মান। আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। এই দায়িত্বটা আমি তোমার উপর দিলাম। আমাদের ডিপার্টমেন্টে তুমি সব থেকে সাকসেস অফিসার। তাই সব থেকে আগে তোমার নামটাই আমার মাথায় এলো। কাজে লেগে পড়ো।’
ভারত সরকারের এক নতুন ডিপার্টমেন্ট – এন এস ডব্ল্যু ( ন্যাশনাল সিক্যুরিটি উইং )। যেমন যেমন দিন এগিয়েছে, অরাজকতা ছড়িয়েছে চারিদিকে। কিছু বছর আগে পর্যন্তও দেশের ভিতরের নিরাপত্তার দায়িত্ব ছিল পুলিশের হাতে। কিন্তু বহুক্ষেত্রেই পুলিশের অসফলতা ভাবতে বাধ্য করে সরকারকে। আগে পুলিশ অথবা সরকারি গোয়েন্দা এজেন্সি থেকে উচ্চ মানের অফিসারদের নিয়ে শুরু হয়েছিল এন এস ডব্ল্যু। আস্তে আস্তে এন এস ডব্ল্যু’তে কর্মচারীর সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজন হলো। শুরু হলো সম্পূর্ণ আলাদা পদ্ধতিতে এই নতুন ডিপার্টমেন্টে কর্মচারী নির্বাচন।
এন এস ডব্ল্যু দেশ জুড়ে পেল বেশ কিছু তুখোড় অফিসার। তাদেরই মধ্যে একজন অর্চিষ্মান অধিকারী। অর্চিষ্মানের স্ত্রী অনন্যা অধিকারী নিজেও কাজ করে এন এস ডব্ল্যু’তে। চাকরি সূত্রেই পরিচয়, বন্ধুত্ব, অবশেষে বিয়ে। তাদের বিয়ে হয়েছে প্রায় ছ মাস হলো।
নিজের সিনিয়ার আভির্ভাব গাঙ্গুলীর সাথে মিটিং করে অর্চিষ্মান যখন নিজের ফ্ল্যাটে ফিরলো তখন রাত প্রায় ন’টা বাজে। ডিনার টেবিলে অনন্যাকে সব কথা বলল অর্চিষ্মান।
‘এটা তো এক না এক দিন হওয়ারই ছিল।’ সব কথা শুনে বলল অনন্যা।
‘মানে? কী বলতে চাও তুমি?’
‘আমি এটা বলতে চাই যে মানুষ নিজের শত্রু নিজেই। মানুষের থেকে বড় শত্রু মানুষের নেই। মানুষ নিজের চিতা নিজেই বানায় আর নিজের কবর নিজেই খোঁড়ে।’
‘হেঁয়ালি করো না অনন্যা। কী বলতে চাও সেটা পরিস্কার করে বলো।’ বলল অর্চিষ্মান।
‘তোমার ইনভেস্টিগেশনের ক্ষেত্রে একটা ক্লু তোমায় দিতে পারি অর্চিষ্মান। জানি না সেই ক্লু’টা তোমার কত কাজে আসবে।’
‘কী ক্লু?’
তাদের ডিনার শেষ। খাবারের প্লেটগুলো রান্না ঘরে রেখে সোফাতে অর্চিষ্মানের পাশে বসে অনন্যা বলল – ‘তুমি তো জানো যে আমার চিরকালই বই পড়ার খুব শখ। আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে.. বছর কম বেশি হতেও পারে, প্রফুল্ল গুহ নামের এক প্রফেসরের একটা বই বেরিয়েছিল। বইটার নাম ছিল – দি এম্পটি আর্থ। বইটা খুব যে বিখ্যাত তা নয়, কিন্তু বইটাতে অনেক কিছু দেওয়া আছে। আজ যে সমস্যার কথা তুমি বলছো, সেটার বিষয় প্রফুল্ল গুহ বহুদিন আগেই লিখে গেছেন।’
‘তুমি কি বইটা পড়েছ?’ জিজ্ঞাসা করলো অর্চিষ্মান।
‘না, বইটা পড়িনি আমি। তবে বইটার রিভিউ পড়েছি। অর্চিষ্মান, আমরা আজকের দিনে চারিদিক দিয়ে ঘিরে আছি অসংখ্য বিষাক্ত রেডিয়েশনে। প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে রেডিয়েশন তত বিষাক্ত হচ্ছে। বিষাক্ত রেডিয়েশনের ফলে আজ থেকে পঞ্চাশ, ষাট বছর আগে থেকেই পাখি ও পোকামাকড়ের বহু প্রজাতি বিলুপ্ত হওয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল। সেই বইয়ে সাবধান করে দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল যে বিজ্ঞানের উন্নতির সীমা থাকা উচিত। বিজ্ঞান যত উন্নতি করবে, মানুষ তত তাড়াতাড়ি ধ্বংসের দিকে এগোবে।’
‘তার মানে তুমি এটা বলতে চাও যে মনুষ্য জাতি বিলুপ্তের পথে এগোচ্ছে?’ প্রশ্ন করলো অর্চিষ্মান।
‘হতেও পারে। বিষাক্ত সব রেডিয়েশনের ফলে মানুষের মধ্যে প্রজনন ক্ষমতার যে হ্রাস হবে সেটা তো জানা কথা। যখন মানুষের মধ্যে প্রজনন ক্ষমতা থাকবে না তখন পপুলেশন বাড়ার রেশিওতেও যে হ্রাস ঘটবে সেটা আর বলে দিতে হবে না।’
ঘাড় হেঁট করে অনন্যার কথা গুলো শুনছিল অর্চিষ্মান। কথাগুলো ঠিকই বলছে সে, কিন্তু তাও এসব কথা মেনে নিতে মন চাইছে না অর্চিষ্মানের। অনেক রাত পর্যন্ত ইন্টারনেট ঘাঁটলো সে। ‘দি এম্পটি আর্থ’এর বিষয় অনেক তথ্য সংগ্রহ করলো। শুধুমাত্র বিষাক্ত রেডিয়েশনের জন্য দেশের এমন অবস্থা, এটা মেনে নিতে মন চাইছে না তার। মন কেন চাইছে না, সেটার উত্তর সে নিজেও জানে না।
পর্ব– ৫
লাঞ্চ টাইম। অফিসের ক্যান্টিনে চুপচাপ বসে আছে অর্চিষ্মান। কোথায় থেকে তদন্ত শুরু করবে ভেবে পাচ্ছে না সে। প্রফেসার প্রফুল্ল গুহ’র যুক্তি দিয়ে কেসের ফাইলটা বন্ধ করে দেওয়াও ঠিক মনে করছে না সে। কেমন যেন দায়সারা কাজ হবে সেটা। এর মূলে সত্যিই যদি কোনও গভীর রহস্য থাকে তাহলে সেটা চিরকালের মত রহস্যই থেকে যাবে। কিন্তু সে তদন্ত শুরু করবেই বা কোথা থেকে? কাল অনেক রাত পর্যন্ত জন্মবৃদ্ধি অনুপাতের হ্রাসের বিষয় ইন্টারনেট ঘেঁটে তথ্য জোগাড় করেছে সে, নানা ওয়েবসাইট থেকে। বিষাক্ত রেডিয়েশনের বিষয় অনেক ওয়েবসাইটেই লেখা আছে। আর লেখা আছে বেশ কিছু মেডিক্যাল কারণ। পুরুষের শরীরে শুক্রাণু হ্রাসের অনেক মেডিক্যাল কারণ খুঁজে পেল সে। কিন্তু কোনও তথ্যতেই সন্তুষ্ট হতে পারলো না অর্চিষ্মান। চিন্তায় মগ্ন ছিল সে। তার সামনের চেয়ারে কখন সপ্তর্ষি এসে বসেছে, সে খেয়াল করেনি। সপ্তর্ষি ভৌমিক, অর্চিষ্মানের কলিগ।
‘ধ্যানমগ্ন দেখছি।’
সপ্তর্ষির কথায় সংবিৎ ফিরে পেল অর্চিষ্মান।
‘সকাল থেকে তোকে দেখিনি অফিসে।’ অর্চিষ্মান বলল।
‘ছিলাম না রে। গিয়েছিলাম হসপিটাল।’
‘হঠাৎ হসপিটাল? এনি প্রবলেম?’
‘প্রবলেমটা আমার নয়। আমার এক বন্ধুর। আমার ছোট বেলার বন্ধু। বলতে গেলে তার জীবনে ঝড় উঠেছে। সুসাইড অ্যাটেম্পট করেছে সে।’
‘ব্যাপারটা কী?’ প্রশ্ন করলো অর্চিষ্মান।
খানিক চুপ থেকে সপ্তর্ষি বলল – ‘পারিবারিক সমস্যা আর কি। ছেলেটা চিরকালই খুব ভালো, আমার খুব কাছের বন্ধু। সব কথাই আমার সাথে শেয়ার করে সে। প্রায় এক বছর হয়েছে তার বিয়ের। বর, বৌ দু’জনেই ভালো চাকরি করে। হঠাৎ তার বৌ অন্য একজনের প্রেমে পড়ে। অদ্ভুত ব্যাপার দেখ, যার প্রেমে পড়ে সে আবার একটা মহিলা। বলতে গেলে তারা লেসবিয়ান।’
কথাটা শুনে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলল অর্চিষ্মান। বলল – ‘এমন ঘটনা আজ চারিদিকে। এতে নতুনত্ব কিছু নেই।’
‘ঠিকই বলেছিস। এটা যেন একটা ট্রেন্ড হয়ে যাচ্ছে, একটা ফ্যাশান হয়ে যাচ্ছে।’
‘সব জিনিসের পিছনেই কিছু না কিছু কারণ থাকে সপ্তর্ষি। হঠাৎ করে কেউ নিজেকে পরিবর্তন করে না। মনে কর তোর বন্ধুর বৌ যদি বাই সেক্সুয়াল হত তাহলে খুব সম্ভব বিয়ের আগেও তার কোনও না কোনও নারীর সাথে সম্পর্ক থাকতো। বিয়ের এত দিন পর হঠাৎ করে সে কোনও নারীর প্রেমে পড়তো না।’
খানিক চুপ থেকে এদিক ওদিক তাকিয়ে সপ্তর্ষি বলল – ‘সব কথা এখানে বলা যাবে না অর্চিষ্মান। শোনার অনেক লোক আছে এখানে। সবার সামনে কারোর পারসোনাল লাইফ ডিসকাস করে সেই লোককে ছোট করতে চাই না আমি। আর সব থেকে বড় কথা সে যখন আমার বন্ধু। বাইরে চল, তোকে বলছি সব।’
চলবে…
কৌতুহলোদ্দীপক …. এগিয়ে চলুন ।